বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
দুই জেলায় চাঞ্চল্যকর হত্যা বস্তাবন্দী লাশ ও ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। কালের খবর জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাংবাদিকরাও সহযোদ্ধা। কালের খবর বাঘাইছড়িতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আলোচনা সভা ও সফল মৎস্য চাষিদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ। কালের খবর পানছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় অসহায় মানুষদের বিজিবির বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ। কালের খবর যাত্রাবাড়ীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আ. লীগ নেতা আল আমিন গ্রেপ্তার। কালের খবর ঢাকাস্থ খাগড়াছড়ি জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরাম এর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর ভারী বর্ষণে ডেমরায় ডুবছে সড়ক ও নিম্নাঞ্চল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও জমছে পানি। কালের খবর সাংবাদিক নির্যাতনে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের জেল! কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনা অভিযানে ৯ লাখ টাকার অবৈধ কাঠ জব্দ। কালের খবর মা‌টিরাঙ্গায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন। কালের খবর
হিন্দু শিক্ষককে দেয়া হল জানাজা! কালের খবর

হিন্দু শিক্ষককে দেয়া হল জানাজা! কালের খবর

 

শফিকুল ইসলাম, রায়পুরা (নরসিংদী), কালের খবর : 

তিনি শিক্ষকতা করেছেন ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায় মির্জারচর ইউনিয়নের পিরিজকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক হিসাবে তার সুখ্যাতি রয়েছে মৃত্যুর পরও। বলা হচ্ছিল, হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধক ও শিক্ষক হেমন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক (৭৫) এর কথা। তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। অসংখ্য শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষায় আলোকিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি পরলোক গমন করেন ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর। তার শেষকৃত্য হয়েছে পরের দিন বিকালে।

শিক্ষক হিসাবে তিনি নিজের জীবনের সোনালী সময়টুকু দিয়েছেন শিক্ষা বিস্তারে। চিরকুমারও ছিলেন হেমেন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক। কিন্তু তার মৃত্যুর পর একদল মুসলিম ধর্মাবম্বী পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই ইসলামের রীতি অনুয়ায়ী নামাজে জানাজা সম্পন্ন করেন। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে, নেটিজেনরাও নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক হেমেন্দ্র প্রমাণিক
শিক্ষক হেমেন্দ্র প্রমাণিক
শাহনূর শাকিল নামের একজন ভিডিওটির ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন, ‘ইসলাম কে আর কত নিচে নামাবে…? এরাও রাষ্ট্র ক্ষমতা চায়…! এদের পক্ষেও ফেসবুকে কিছু দালাল ফতোয়া দেয় আর অন্য দলকে নাস্তিক বলে। মৃত ব্যক্তির নাম হেমন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক (৭৫)। তিনি পিরিজকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩০ বছর শিক্ষকতা করে অবসরে যান। ঘটনা: পিরিজকান্দি, রায়পুরা উপজেলা, নরসিংদী জেলা। ২৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. (প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি ৩ নভেম্বর দুপুরের)
আরে ভাই,
মন্দিরে ইসলামী গান, গীতা পাঠ, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, হিন্দু শাখা গঠন পর্যন্ত তো করা শেষ, এখন জানাজা করলেন..! আর কি বাকি….!?
ইমলামী জলসায় গিয়ে যদি কেউ গীতা পাঠ করে, জানাজায় গিয়ে যদি হরিবল বলে মেনে নিতে পারবেন…? পারবেন না, বরং সর্বশক্তি দিয়ে পিটিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবেন। অথচ গত তিন মাসে সব নোংরামি করা শেষ। এসব কি ধর্মীয় উসকানি নয়, ধর্ম অবমাননা নয়, ইমলামকে বড় করতে গিয়ে অন্য ধর্মকে ছোট করা নয়….?? প্রতিবাদ করলেই বলবেন আওয়ামী দালাল, ভারতীয় দালাল….!!! হিন্দু বা মুসলমান নয় মানুষ হিসেবে আপনার অনুভূতি কেমন মন্তব্য করে জানাতে পারেন….।’’

৪ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের মূল ভিডিও নিয়ে কথা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, কোনো মুসলমানের পক্ষেই একজন অন্য ধর্মালম্বী মানুষের শেষকৃর্ত্যে গিয়ে জানাজা করার সুযোগ নেই। তিনি যে ধর্মের অনুসারী ছিলেন, তাকে সেই ধর্মের রীতি অনুযায়ীই সমাহিত করতে হবে। সেখানে ইসলামের কোনো মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারেন, কিন্তু ইসলামের রীতি অনুযায়ী কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। এটাকে কখনোই সমর্থন করা যায় না।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাবি
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাবি
শিক্ষক হেমন্দ্র প্রামাণিকের লাশ সামনে রেখে স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ মিয়া নিজ দায়িত্বে নেতৃত্ব দিয়ে জানাজার আয়োজন করে। এ সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে রায়পুরার সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার নিমিত্তে স্থানীয় মির্জারচর ইউনিয়ন পরিষদের গণমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে দেয়নি। কিন্তু ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে সারাদেশেই সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ভবিষ্যতে এ ধরণের বিতর্কিত কাজে কাউকে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পিরিজকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক।

উল্লেখ, চিরকুমার স্কুল শিক্ষক হেমেন্দ্র প্রমাণিকের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তিনি যে ঘরে বসবাস করতেন সেখানেই তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্ম মতে এটি করার সুযোগ রয়েছে। শ্মশান পদ্ধতি ছাড়াও হিন্দুধর্মের বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় মৃতদের সমাধি দেওয়ার রীতি অনুসরণ করে। কিছু সম্প্রদায়ে, গুরুত্বপূর্ণ সাধুদের সমাধিস্থ করা হয়। প্রস্তুতিমূলক আচার-অনুষ্ঠানগুলি শ্মশানের মতই কমবেশি অনুরূপ, যেমন মৃতদেহ ধোয়া, মৃত ব্যক্তির কপালে বিবুথি বা চাঁদম লাগানো ইত্যাদি, কিন্তু দাহ করার পরিবর্তে মৃতকে কবর দেওয়া হয়। দেহটিকে হয় ঘুমন্ত অবস্থায় রাখা হয় অথবা কিছু শৈব ও উপজাতীয় ঐতিহ্যে পদ্মাসনে বসে পা ভাঁজ করে এবং বাহু উরুতে বিশ্রাম করে ধ্যানের অবস্থানে থাকে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com